রোজা রাখার অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। 

  • ওমেন্স কর্নার
  • এপ্রিল ৭, ২০২৩

১৪০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলমানরা নিয়মিতভাবে রমজান মাসে রোজা রেখে আসছেন। শুধু ধর্মীয় রীতি অনুসারেই নয়, রোজা রাখার স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক। যা আপনাকে বিস্মিত করবে।

জানেন কি, প্রাচীন গ্রীকরা শরীরকে সুস্থ রাখেতে রোজা রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। এমনকি কিছু বিজ্ঞানীরাও রোজা রাখার মানসিক ও শারীরিক সুবিধা গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলায় কম খাদ্য গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যা যেমন- উচ্চ কোলেস্টেরল, হৃদরোগ ও স্থূলতা প্রতিরোধ করে। পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি ঘটায়।

চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক রোজা রাখার আরও উপকারিতা সম্পর্কে-

১। রোজা রাখলে শরীরের ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যায়:     

পবিত্র রমজান মাসে আমরা টানা ৩০ দিন লম্বা সময় ধরে রোজা রাখি। রোজায় দিনের বেশীরভাগ সময় আমরা খাবার গ্রহণ না করার কারণে আমাদের শরীরের লিভার, পাকস্থলী এবং অন্যান্য অঙ্গ বিশ্রাম পায়। আর যেহেতু আমাদের শরীর তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে তাই এসময় আমাদের শরীরে যে টক্সিন বা বিষাক্ত পদার্থ গুলো জমা হয়ে ছিল সেগুলো শারীরিক ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে করে আমাদের অঙ্গ প্রতঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, পরিপাকতন্ত্র পরিস্কার হয়ে যায় এবং রক্ত সঞ্চালনের উন্নতি ঘটে।

আরো পড়ুন: আপনার শিশু মারামারি করে? কিভাবে সমাধান করবেন?

২। রোজায় হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়:

লম্বা সময় খাবার থেকে বিরত থাকার কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম পায়, লিভার থেকে এনজাইম নিঃসরণ হয় যেগুলো শরীরের চর্বি এবং কোলেস্টেরলকে ভেঙ্গে বাইল এসিডে  রুপান্তরিত করে যেটা কিনা পরিশেষে হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া যে খাবার গুলো আগে হজম হয়নি সেগুলো হজম হয়ে পাকস্থলী ও অন্ত্র পরিস্কার হয়। এছাড়া রোজা টানা রাখার কারণে ক্ষুধা কমে যায় এবং শরীরে ক্ষুধা সৃষ্টির হরমোন কম নিঃসৃত হয় যার ফলে অল্প খেলেই ক্ষুধা মিটে যায়। এই পরিবর্তনও পরিপাকতন্ত্র এবং হজমের জন্য ভালো।        

৩। ওজন হ্রাস করতে সাহায্য করে:

আমরা যদি দীর্ঘ সময় রোজা রাখি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার পরিমিত ভাবে খাই তাহলে ওজন কমানো খুব সহজ হয়ে যায়। কেননা লম্বা সময় না খেয়ে থাকার কারণে আমাদের শরীর বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কাজ সাধনের জন্য শরীরে উপস্থিত চর্বিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে থাকে। যেহেতু এ প্রক্রিয়ার শরীরে জমা চর্বি ব্যবহিত হয়ে যায় এতে করে ওজন হ্রাস পায়।      

৪। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার মধ্যে শ্বেত রক্তকনিকা অন্তর্ভুক্ত এবং রোজা রাখার মাধ্যমে নতুন শ্বেত রক্তকনিকার উৎপত্তির মাধ্যমে আরও বেশি কার্যকরী হয় এবং স্বাস্থ্য সম্মত ও বলিষ্ঠ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে। এছাড়া দীর্ঘ সময় খাবার বিরতির পর আমরা যখন ইফতার করি তখন আমাদের শরীরে “স্টিম সেল” নামক কোষ পুনরুদ্ধার হয় যেখানে লাল এবং শ্বেত রক্ত কনিকা ও প্লাটিলেট থাকে যার কারণেও আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।    

আরো পড়ুন: শিশুরা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর পর কেঁদে ওঠে কেন?

৫। রক্তচাপ কমায়:

দিনের লম্বা সময় খাবার না খাওয়ার কারণে শরীর লবণ গ্রহণ করে না এবং সারাদিনে ইউরিন বা মুত্রের সাথে লবণ বের হয়ে যায় যার ফলে রোজা রাখার কারণে রক্তচাপ কমে।  

৬। শরীরের চর্বি কমাতে সাহায্য করে:

রোজা রাখার কারণে আমাদের শরীরে “হিউম্যান গ্রোথ হরমোন” নামে একটি হরমোন উৎপন্ন হয় যেটা শরীরের চর্বি গলাতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। 

৭। হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে:

রোজা রাখার কারণে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমান হ্রাস পায়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত হয় ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং উন্নতি সাধন হয়।  

৮। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন:

রোজা রাখার কারণে ক্যালরি, চিনি এবং লবণ কম পরিমানে খাওয়া হয় যার কারণে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য শক্তিশালী হয়, স্ট্রেস কমে এবং মানসিক সচ্ছতা পাওয়া যায়।    

৯। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ:

রোজা এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস রক্তের সুগারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে যার কারণে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে টাইপ-২ ডায়াবেটিক এর ক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।   

আরো পড়ুন: কোলেস্টেরল কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না? জানুন সমাধান। 

১০। বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ধীর করে:

রোজা রাখার কারণে শরীরে বেশ কিছু প্রক্রিয়া হয়ে থাকে যেমন অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরের ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলি নিজেই নিজেদের অপসারণ করে। এছাড়া শরীরে জমা থাকা ক্ষতিকর পদার্থ শারীরিক প্রক্রিয়ায় শরীর থেকে বের হয়ে যায়। পরিপাকতন্ত্র, লিভার, হার্ট এবং অন্যান্য অঙ্গের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনার উন্নতি সাধন হয়। সব মিলিয়ে শারীরিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর হবার সম্ভাবনা থাকে।    

১১। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়:

রোজা রাখা অবস্থায় রক্তে “এনডোরফিনস” নামক হরমোন এর পরিমান বৃদ্ধি পায় যেটা নাকি একটা প্রশান্তির অনুভূতি দেয়। এর ফলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বৃদ্ধি পায়।   

তবে এতসব স্বাস্থ্য উপকারিতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কিন্তু স্বাস্থ্যকর ইফতার এবং সেহেরী নিশ্চিত করা লাগবে। অস্বাস্থ্যকর এবং বেশি করে মসলা, তেল এবং লবণ ব্যবহার করা ইফতার কিন্তু আমাদের জন্য সুস্বাস্থ্যের বদলে অসুস্থতা নিয়ে আসবে যেটা আমরা অবশ্যই এই করোনাভাইরাসের ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে চাই না। 

আর পরিশেষে আরেকটি কথা না বললেই নয়। আমাদের রোজা রাখার মূল উদ্দেশ্য কিন্তু হতে হবে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি আর তার পাশাপাশি যে স্বাস্থ্য উপকারিতা আমরা পাচ্ছি সেটা হচ্ছে প্রত্যাশার অতিরিক্ত।

আরো পড়ুন: একজন নবজাতক শিশু তার মাকে কীভাবে চিনতে পারে?

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment